আপনারা অবগত আছেন যে, সম্প্রতি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ কে সামনে রেখে ঘোষিত হয়ে গেলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ১৫ সদস্যের স্কোয়াড। এই স্কোয়াড দেখে নানা জনে নানা মন্তব্য করছেন। কেউ করছেন সমালোচনা, আবার কেউ করছেন প্রশংসা। এটাই স্বাভাবিক, কারন উপমহাদেশে আয়োজিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের এই ১৫ জনের উপর নির্ভর করছে ১৫ কোটি দেশবাসীর আশা-ভরসা। এরাই বিশ্বকাপে ভালো খেলে আমাদের গর্বিত করবে এটাই সবার আশা। ফলে বাংলাদেশ দল নিয়ে এমন আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আপনাদের সবার জন্য বাংলাদেশ দলের ১৫ সদস্যের নাম নিচে দিলাম-
চূড়ান্ত স্কোয়াডঃ সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিক, শাহরিয়ার নাফীস, রকিবুল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম, নাঈম ইসলাম, মাহমুদউল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, নাজমুল হোসেন, মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।
এই দল নিয়ে প্রধান বিতর্ক দুটি-
১. মাশরাফির দলে স্থান না পাওয়া
২. আশরাফুলের দলে অন্তর্ভূক্তি
এই দুটি বিষয় নিয়েই আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, এই ব্যাপারে আমার ভাবনা জানাতেই এই পোস্ট।
মাশরাফি কেন দলে নেই?
মাশরাফি মর্তুজা দেশসেরা পেস বোলার এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু ইনজুরি তার ক্যারিয়ারে বিরাট অংশে বারবার ছায়া ফেলেছে। অনেক আসরেই ইনজুরির করাল গ্রাসে তিনি খেলতে পারেন নাই। দেশ বারবার বঞ্চিত হয়েছে তার খেলা থেকে। ইনজুরির সাথে নিরন্তর সংগ্রামরত একজন খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপের মত বড় আসরে খেলানোর ঝুঁকি নেওয়াটা কি যৌক্তিক? তাকে দলে না নেওয়ায় তার এলাকা নড়াইলে হরতালের মত ঘটনাও ঘটেছে যা আসলেই দুঃখজনক। তার বিরাট ভক্তগোষ্ঠী রয়েছে যাদের জন্য এটি মেনে নেওয়া কষ্ট, এটা যেমন ঠিক তেমনি তিনি কেন দলে নেই সেটাও বিবেচনা করা দরকার। আধুনিক ক্রিকেটে আবেগের কোন স্থান নেই, প্রয়োজন ও পেশাদারিত্বটাই এখানে প্রধান। এটা আমাদের সবাইকেই বুঝতে হবে। ইনজুরি আক্রান্ত মাশরাফিকে দলে নিয়ে যদি বিশ্বকাপের মাঝপথে তিনি আবার ইনজুরিতে পড়তেন তাহলে সেটি কি ভালো হতো? এর প্রভাব বাংলাদেশ দলের খেলায় পড়তে পারতো, পাশাপাশি মাশরাফির ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে যেতো যেটি আমাদের কারোরই কাম্য নয়। তাই আমি মনে করি তাকে দলে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক আছে।
আশরাফুল কেন দলে স্থান পেল?
আশরাফুল, যিনি একসময় বেশকিছু দারুন ইনিংস খেলে সাহায্য করেছিলেন বাংলাদেশ দলের অবিস্মরনীয় কিছু জয়ে, দারুন শট খেলার পারদর্শিতার কারনে যাকে দেওয়া হয়েছিল 'লিটল মাস্টার' খেতাব সেই আশরাফুলের দলে অন্তর্ভূক্তি নিয়ে বিতর্কের কিছু থাকার কথা নয়। কিন্তু কেন এই বিতর্ক? কারন গত কয়েক বছর যাবত ফর্মহীনতার ভুগছেন তিনি, এই আশরাফুল অতীতের স্মৃতিমাত্র। বারবার সুযোগ দেওয়া হলেও তিনি তার সদ্বব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছেন। ১০ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে যিনি মাত্র ১ ম্যাচে ভালো খেলেন আর বাকি ৯ ম্যাচে ফ্লপ মারেন তাকে দলে রাখা নিয়ে বিতর্ক হওয়াটাই স্বাভাবিক। এখন তিনি দলের বোঝা ছাড়া আর কিছুই নন। শুধু কতিপয় নির্বাচকের কৃপাদৃষ্টি আর কিছু মিডিয়ার অতি-উৎসাহের কারনেই তিনি দলে সুযোগ পেয়েছেন বলে অনেকে ধারনা করছেন। যেখানে অলক কাপালী, আফতাবের মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বাদ পড়েছেন সেখানে আশরাফুলের মত ফর্মহীনতায় ভোগা একজনকে দলে সুযোগ দেওয়াটা কি ঠিক হলো? তাকে দলে নেওয়া না নেওয়া নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে, তিনি যদিও আশ্বাস দিয়েছেন প্রাপ্ত সুযোগ তিনি কাজে লাগাবেন কিন্তু তাতে বিশ্বাস করার মত ক্রিকেট ভক্ত খুবই কম। বরং তাকে দলে রাখায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে দেশজুড়ে। আমার মতে আশরাফুলকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত খুবই অযৌক্তিক। তার সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় তিনি বিশ্বকাপেও দলের জন্য বোঝা হতে যাচ্ছেন বলেই ক্রিকেট বোদ্ধাদের অভিমত। এখন তিনি আসলেই কিছু করতে পারেন কি না এর উপর নির্ভর করছে তার ভবিষ্যত ক্যারিয়ার। তবে বিশ্বকাপে ব্যর্থ হলে তার ক্যারিয়ার যে প্রায় শেষ হয়ে যাবে সেই ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ।
পরিশেষে দেশের আপামর ক্রিকেট ভক্তের মত আমারও প্রত্যাশা সব বিতর্ক পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দল নিজ মাটিতে বিশ্বকাপে দারুন ভালো করবে। তাদের খেলা দেশবাসীকে দিবে নতুন আশা। বাংলাদেশ দলের সাফল্যে সবাই মেতে উঠবে আনন্দে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য রইলো অনেক শুভকামনা। জয়তু টাইগার!
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ তে বাংলাদেশ দলের ম্যাচ ফিক্সচার (প্রথম রাউন্ড)
তারিখ- ১৯/০২/২০১১-> প্রতিপক্ষ- ভারত-> ভেন্যু- ঢাকা (দিবা-রাত্রি)
তারিখ- ২৫/০২/২০১১-> প্রতিপক্ষ-আয়ারল্যান্ড-> ভেন্যু- ঢাকা (দিবা-রাত্রি)
তারিখ- ০৪/০৩/২০১১-> প্রতিপক্ষ- ওয়েস্ট ইন্ডিজ-> ভেন্যু- ঢাকা (দিবা-রাত্রি)
তারিখ- ১১/০৩/২০১১-> প্রতিপক্ষ- ইংল্যান্ড-> ভেন্যু- চট্টগ্রাম (দিবা-রাত্রি)
তারিখ- ১৪/০৩/২০১১-> প্রতিপক্ষ- নেদারল্যান্ড-> ভেন্যু- চট্টগ্রাম
তারিখ- ১৯/০৩/২০১১-> প্রতিপক্ষ- দঃ আফ্রিকা-> ভেন্যু- ঢাকা (দিবা-রাত্রি)
2 মন্তব্য:
আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি বর্তমান টিমের ম্যানেজম্যান্টের উপর নাখোস আশরাফুলের প্রোপার ইউজ না করার জন্য। সে চার নম্বরে ভালো করবে না, তাকে শেষ দিকে নামিয়ে একটা চেষ্টা করা যেতে পারে। যাই হোক, দলের জন্য শুভকামনা।
প্রথম কমেন্টদাতা আমিই হলাম :P
@প্রখর রুদ্র, ধন্যবাদ জানাই আপনাকে আমার ব্লগে প্রথম কমেন্টটি করার জন্য :)
:)) ;)) ;;) :D ;) :p :(( :) :( :X =(( :-o :-/ :-* :| 8-} :)] ~x( :-t b-( :-L x( =))
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন