১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

বর্ণাঢ্য উদ্বোধনীর মাধ্যমে শুরু হলো বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১

আপনি যদি এই ব্লগের নতুন পাঠক হন আর পরবর্তী সকল নতুন পোস্ট দ্রুত পেতে চান
তাহলে সাবস্ক্রাইব করুন RSS Feed !
ঢাকায় গতকাল আলোর ছটায় বর্ণিল উদ্বোধনীর মাধ্যমে পর্দা উঠলো বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ এর। ভারত-বাংলাদেশ-শ্রীলংকার যৌথ আয়োজনে আয়োজিত এই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পেয়েছিল বাংলাদেশ। মোটামুটি সফল একটি উদ্বোধনী তারা আয়োজন করতে পেরেছে বলেই সবার ধারনা। দীর্ঘদিন পর দেশবাসী আন্তর্জাতিকমানের কোন উদ্বোধনী দেখতে পেল দেশের মাটিতে। এই ব্যাপারে বিসিবি, ক্রীড়া মন্ত্রনালয়, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী সহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই ধন্যবাদ পেতেই পারে। দেশ-বিদেশের শিল্পী-কলাকুশলীদের অংশগ্রহনে চমৎকার একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরেছে বাংলাদেশ। স্বাগতিক দেশগুলোর নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি পরিবেশন ছাড়াও ব্রায়ান এডামসের মত আন্তর্জাতিক শিল্পীর নজরকাড়া উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে করে তুলেছিল দর্শকদের চোখে দারুন উপভোগ্য। মাঠে উপস্থিত দর্শক ছাড়াও দেশের আনাচে-কানাচে সকল দেশবাসী টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিল এই অনুষ্ঠানের দিকে। এর পাশাপাশি স্যাটেলাইটের কল্যাণে বিশ্বের ১৮০টির মত দেশে এই অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করার কারনে বিশ্ববাসীও শামিল হয়েছিল এই কাতারে। অবশেষে মানসম্মত একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করে সবাই বাংলাদেশের সামর্থ্যের প্রমাণ পেলো।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিট নাগাদ। প্রথমেই ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত। এরপর ইবরার টিপুর নেতৃত্বে মঞ্চে যৌথ সংগীত পরিবেশন করেন মিলা, বালাম, এলিটা, কনা, অর্ণব সহ আরো কয়েকজন। এরপর অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষন হিসাবে ঐতিহ্যবাহী রিক্সায় চড়ে একে একে মাঠে প্রবেশ করেন অংশগ্রহনকারী ১৪ টি দেশের ক্রিকেট দলের অধিনায়করা। এসময় বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আগমনে করতালিতে ফেটে পড়ে মাঠভর্তি সমর্থকরা। সকল অধিনায়ক মঞ্চে আরোহনের পর ভারতের শিল্পী সোনু নিগম 'লেটস গো ফর গ্লোরি' শিরোনামে একটি গান গেয়ে শোনান। এরপর বিসিবি সভাপতি, ক্রীড়ামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, আইসিসি চেয়ারম্যানের স্বাগত বক্তব্য আর বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ঘোষনার বক্তৃতার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ এর। এরপর 'এরিয়েল ক্রিকেট' নামে একটি মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী দেখানো হয় একটি উঁচু ভবনের গায়ে।




অনুষ্ঠানের পরের পর্বে ছিল স্বাগতিক দেশগুলোর নিজস্ব শিল্পীদের পরিবেশনা। প্রথমেই ভারতীয় শিল্পীরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্য তুলে ধরে নাচ ও গান পরিবেশন করে দর্শকদের আনন্দ দেন। এরপর মাঠে আসেন শ্রীলংকার শিল্পীরা, তারা নিজেদের দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরেন উপস্থিত সবার সামনে। এরপর ছিল বাংলাদেশের পরিবেশনা। প্রথমেই দেশের তিন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা আর মমতাজের পরিবেশনায় গান। এরপর একঝাঁক নৃত্যশিল্পী মনোমুগ্ধকর কোরিওগ্রাফিতে ফুটিয়ে তুলেন আমাদের দেশের নানা সাংস্কৃতিক দিক। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের গৌরবময় ইতিহাস ফুটিয়ে তুলেন তারা তাদের চমৎকার পারফরমেন্সের মাধ্যমে। এসময় বড় পর্দায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের কিছু অংশ দেখানো হয়। এসময় উপস্থিত খেলোয়াড়, অতিথিবৃন্দ সহ সকল দর্শক এসকল আয়োজন প্রাণভরে উপভোগ করেন। এই অংশের পরপরই 'বিউটিফুল বাংলাদেশ' শিরোনামে বড় পর্দায় ভেসে উঠে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন নির্মিত চমৎকার একটি প্রামাণ্যচিত্র। এই প্রামাণ্যচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয় বিশ্বের সামনে আমাদের দেশের নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক স্থানের চিত্র।
অনুষ্ঠানের পরের অংশে মাঠের দর্শকদের মাতিয়ে তুলতে মঞ্চে আসেন আন্তর্জাতিক রকশিল্পী ব্রায়ান এডামস। তিনি জনপ্রিয় গান 'সামার অব ৬৯' সহ আরো দুটি গান গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। এরপর শংকর-এহসান-লয়ের সুর করা বিশ্বকাপের থিম সং 'মার ঘুরিয়ে' (হিন্দি- দে ঘুমাকে) পরিবেশন করা হয়। এভাবেই শেষ হয় ২ ঘন্টার চেয়ে বেশি ব্যাপ্তির এই মনোমুগ্ধকর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি। পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই সকল আয়োজনের পাশাপাশি ছিল আতশবাজির প্রদর্শনী আর আলো-আধাঁরির মোহনীয় পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানের যেসব দিক ভালো লেগেছে
এত বৃহৎ কোন আসরের উদ্বোধনী আয়োজনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য নতুনই বলতে হবে। সেই অনুপাতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক চেষ্টায় মানসম্মত একটি অনুষ্ঠানই আমরা দেখেছি। এই অনুষ্ঠানের কিছুদিক আমাদের নজর কেড়েছে, এর মধ্যে অন্যতম হলো- বাংলাদেশের সাধারন মানুষের নিত্যদিনের বাহন বলে পরিচিত রিক্সায় চড়ে অধিনায়কদের মাঠে প্রবেশ, বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের পরিবেশনা, চমৎকার কোরিওগ্রাফি, এরিয়েল ক্রিকেট প্রদর্শনী, লাইটিং সহ আরো নানাদিক। এর পাশাপাশি ভারতীয় আর শ্রীলংকান শিল্পীদের পরিবেশনাও ছিল চমৎকার। খ্যাতিমান রকশিল্পী ব্রায়ান এডামস তার সুনাম বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন চমৎকার কিছু গান পরিবেশনের মাধ্যমে। সোনু নিগমের গাওয়া বিশ্বকাপ নিয়ে ইংরেজী গানটিও ছিল চমৎকার। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের প্রামাণ্যচিত্রটি ছিল এক কথায় অসাধারন। বাংলাদেশের সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক নানা স্থানের বর্ণনা বিশ্বের সামনে ফুটিয়ে তোলার দারুন একটি মাধ্যম হিসাবে এটিকে বিবেচনা করা যায়। আন্তর্জাতিকমানের এই প্রামাণ্যচিত্রটি সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এটি দেখুন নিচে-





দৃষ্টিকটু ঠেকেছে যেসব দিক
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি মোটামুটি সফল বলা গেলেও এই অনুষ্ঠানের কিছুদিক দর্শকদের নজরে কিছুটা দৃষ্টিকটু ঠেকেছে বলেই মনে হয়। যেসব দিক ভালো লাগেনি তার মধ্যে প্রথমেই আসবে বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের বিরক্তিকর বক্তৃতা। ভুল উচ্চারন, ভুল বক্তব্য আর বাংলা-ইংরেজী মিশেলে তার বক্তব্য যতটা না আন্তর্জাতিক আসরের বক্তব্য বলে মনে হয়েছে তার চেয়ে বেশি মেঠো বক্তৃতা বলেই মনে হয়েছে। বিশেষ করে বক্তব্যের মাধ্যমে বারবার প্রধানমন্ত্রীর অতি প্রশংসা করার প্রয়াস কিছুটা বাড়াবাড়ি ঠেকেছে। ক্রীড়ামন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের বক্তব্যও ছিল গতানুগতিক আর বিরক্তিকর। সেই তুলনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বক্তব্য কিছুটা ভালো ছিল। সাবিনা ইয়াসিমিন আর রুনা লায়লার মত দু'জন খ্যাতিমান শিল্পীর কাতারে মমতাজের মত শিল্পীর পরিবেশনা কতটা মানানসই সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ, মমতাজের কিছু বাজারি গান এই আসরের উদ্বোধনীর সাথে একেবারেই খাপ খায়নি। এছাড়া বাংলাদেশী শিল্পী হয়েও রুনা লায়লার বাংলা গানের পাশাপাশি উর্দু ভাষার একটি গান পরিবেশন কিছুটা দৃষ্টিকটু ঠেকেছে, উনার মত একজন প্রথিতযশা শিল্পীর কাছ থেকে এমনটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। আইসিসি চেয়ারম্যান শারদ পাওয়ারের ভাঙ্গাচোরা উচ্চারণে বাংলা বলার চেষ্টাও অনেকের হাসির উদ্রেক করেছে। তবুও তিনি এবং গায়ক শংকর মহাদেভন বাংলা বলে আমাদের ভাষা আন্দোলনের মাসে বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন বলেই বোধ হচ্ছে। এর পাশাপাশি অনুষ্ঠানের কিছু অব্যবস্থাপনা আর অসামঞ্জস্য ছিল চোখে পড়ার মত।

পরিশেষে ভালো-মন্দ মিশিয়ে দেশবাসী সহ পুরো বিশ্বের সামনে মোটামুটি চমৎকার একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপহার দিতে পেরে বাংলাদেশের প্রশংসার দাবিদার। এখন শুধু অপেক্ষা মূল লড়াইয়ের জন্য যেটি মাঠে গড়াচ্ছে আগামীকাল অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারী শনিবার ভারত বনাম বাংলাদেশের ম্যাচের মধ্য দিয়ে মিরপুরে। আর এরই মাধ্যমে শুরু হবে দেড়মাসের বেশি সময়ব্যাপী জমজমাট ব্যাট-বলের লড়াইয়ের যার পর্দা নামবে ২রা এপ্রিল মুম্বাইয়ে ফাইনালের মধ্য দিয়ে। এই বিশ্বকাপে বাংলার টাইগারদের ঘিরে আমাদের সবার অনেক আশা, অনেক ভরসা। মূল আসরে ভালো পারফরমেন্স করে সবার নজর কাড়বে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আর সেইসাথে ঘরের মাঠে দর্শকদের প্রাণঢালা ভালোবাসা আর সমর্থন নিয়ে আরো একবার বিশ্বকে চমকে দিবে টাইগাররা এমন আশায় করছে ১৫ কোটি মানুষ। বাংলাদেশের দলের জন্য সমর্থন আর ভালোবাসা সবসময়ই থাকবে বিশ্বের সকল বাংলাদেশীর। বাংলাদেশ ভালো খেলুক এই আসরে, আমাদের আশা পূরন হোক, বাংলার দামাল ছেলেরা ছিনিয়ে আনুক বিজয়, এই কামনা করি।
জয়তু বাংলাদেশ! জয়তু ক্রিকেট!

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি যারা দেখতে পারেননি তারা ডাউনলোড করুন এখান থেকে

5 মন্তব্য:

ইরতেজা আলী বলেছেন...

আমারো ভালো লেগেছে। লোটাস কামাল আর দুই মন্ত্রীর ভাষন ছাড়া সব ভালো হয়েছে। সব থেকে বেশি ভাল লেগেছে ১। ব্রায়ান এদামসের গান ২। বাংলাদেশ টুরিজমের বিজ্ঞাপন ৩। রশি দিয়ে ঝুলে এরিয়েল ক্রিকেট আর ৪। ছায়ানটের জাতীয় সঙ্গিত পরিবেশনা।

অভি বলেছেন...

এরিয়েল ক্রিকেটের কথা তো উল্লেখ করতে ভুলেই গেছিলাম :( ঐটাও দারুন হইসে, তবে মন্ত্রীদের বক্তব্য হাস্যকর করে তুলেছে অনুষ্ঠানটা, বাইরের কেউ আমাদের মন্ত্রীগণের ইংরেজী উচ্চারন দেখলে অবাক হবে :P

Unknown বলেছেন...

মমতাজের গান, ভুলে ভরা বক্তব্য বাদ দিলে সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি প্রশংসার দাবী রাখে।

অভি বলেছেন...

@প্রখর রুদ্র, +১

রনি বলেছেন...

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ভালোই লেগেছে, কিছু ত্রুটি বাদ দিলে বাকিসব মনে হয় ঠিকই আছে

মন্তব্যে ইমোটিকন ব্যবহারের জন্য ইমোটিকনের পাশের কোডটি আপনার কি-বোর্ডের সাহায্যে টাইপ করুনঃ
:)) ;)) ;;) :D ;) :p :(( :) :( :X =(( :-o :-/ :-* :| 8-} :)] ~x( :-t b-( :-L x( =))

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন