২৭ জানুয়ারী, ২০১১

কে হতে পারে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন?

আপনি যদি এই ব্লগের নতুন পাঠক হন আর পরবর্তী সকল নতুন পোস্ট দ্রুত পেতে চান
তাহলে সাবস্ক্রাইব করুন RSS Feed !
বিশ্বকাপ ক্রিকেট অত্যাসন্ন! হিসাব মতে আর মাত্র ২২ দিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই আসর। এবারের বিশ্বকাপ উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় এটি নিয়ে উন্মাদনাও কম নয়, সহ-আয়োজক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপ এবার নিয়ে এসেছে নতুন এক মাত্রা। কে হবে এবারের শিরোপা জয়ী? কার হাতে যাবে বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফিটি? এই আলোচনা এখন সবার মুখে মুখে...গত কয়েক বিশ্বকাপের চিরাচরিত অসিদের একক আধিপত্যের ধারা ভেঙ্গে এবার নতুন এক চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় আলোচনা জমে উঠেছে বেশ।
আমার এই পোস্টে বিশ্বকাপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে এমন কিছু দেশ নিয়ে আমার নিজস্ব ভাবনা তুলে ধরার চেষ্টা করছি-
ভারত
বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই হট ফেভারিটের তালিকায় প্রথমেই যে দেশটি নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে সেটি হলো ভারত। সহ-আয়োজক ভারত আগের বিশ্বকাপগুলোতে তেমন সাড়া জাগাতে (২০০৩ বিশ্বকাপে ফাইনাল পর্যন্ত গেলেও ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডেই বিদায়) না পারলেও এবার বেশ আটঘাট বেঁধেই নামছে শিরোপা জয়ের মিশনে। সাম্প্রতিক পারফরমেন্স আর ঘরের মাঠ এই দুটি সুবিধা মিলিয়ে ভারতকে তাই ক্রিকেট বোদ্ধারা রাখছেন তালিকার প্রথম দিকেই।
নিজের মাঠে ভারতের একক আধিপত্যের কথা সবারই জানা, সেই বিষয়টি হয়তো নিয়ামক হতে পারে তাদের ক্ষেত্রে, আবার ঘরের মাঠে নিজ দর্শকদের সামনে খেলার যে চাপ সেটাও মাথায় রাখতে হবে। অনেক সময় এই প্রত্যাশার অধিক চাপ খেলায় প্রভাব ফেলে, তখন ১৯৯৬ বিশ্বকাপের মত অবস্থা হয়ে যেতে পারে। ভারতের বেশকিছু খেলোয়াড় রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে, এর পাশাপাশি দলে রয়েছে একঝাঁক পারফরমার যারা সম্মিলিতভাবে জ্বলে উঠলে শিরোপা জয় তেমন কঠিন কিছু হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রত্যাশার চাপ সামলে উঠে যদি ভারত নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে তাহলে ১৯৮৩ এর পর তাদের শিরোপা জয়ের দীর্ঘ আশা এবার সফল হয়েও যেতে পারে।


দঃ আফ্রিকা
সব বিশ্বকাপেই আশা জাগিয়েও যে দেশটি দূর্ভাগ্যর শিকার হয়ে বারবার ব্যর্থ হয় সেটি হচ্ছে দঃ আফ্রিকা। চোকার অপবাদ যেন তাদের গায়ে সেঁটে বসেছে। ১৯৯২ বিশ্বকাপের সেই ১ বলে ২২ রান ট্রাজেডি থেকে শুরু করে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে টাই ম্যাচ আর ২০০৩ বিশ্বকাপে নিজ মাঠে বৃষ্টি আইনে হারের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের। তবুও এবার সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের তালিকায় স্থান পাবে প্রোটিয়াসরাও। সম্প্রতি ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে তারা, এর পাশাপাশি তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম আশা জাগাচ্ছে সমর্থকদের মনে। দলে রয়েছে আমলা, ক্যালিস, ডি ভিলিয়ার্স, স্মিথদের মত জাত ব্যাটসম্যান আর স্টেইন, মর্কেলদের মত ফাস্ট বোলার। তবুও ভারতীয় কন্ডিশনে যে সমস্যাটি তাদের ভোগাতে পারে তা হলো দলে ভালোমানের স্পিনারের অভাব আর স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে তাদের চিরাচরিত দূর্বলতা। তবে ব্যাটিং কন্ডিশনে তাদের ব্যাটসম্যানদের উপরই ভরসা করতে হবে প্রোটিয়াসদের। দঃআফ্রিকাও তাদের দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে যোগ্য দল হিসাবেই এবার শিরোপা জেতার ব্যাপারে আশাবাদী বলেই জানা গেছে। তবে দঃআফ্রিকার বেলায় খেলার পাশাপাশি ভাগ্যদেবীর সহায়তাও অনেক বড় একটি বিষয় বটে!
ইংল্যান্ড
যে দলটির নাম এবার বিশেষভাবে উচ্চারিত হচ্ছে সেটি হলো ইংল্যান্ড। ক্রিকেট খেলার আবিষ্কারক ইংল্যান্ডই কখনো ছুঁতে পারেনি বিশ্বকাপ নামক সোনার হরিণটি! বিচিত্র হলেও এই কথাটি সত্য। বেশ কয়েকবার ফাইনালে গিয়েই থেমে যেতে হয়েছে তাদের। সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছে ইংল্যান্ডে, কিন্তু নিজ মাটিতেও সুবিধা করতে পারেনি তারা। এবার তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় ফেভারিটের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে তারা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এশেজ সিরিজ জয় আর ওয়ানডেতে ভালো পারফরমেন্স তাদের নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে ক্রিকেট বোদ্ধাদের। এছাড়াও টি-২০ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারাই। গত কয়েক বছরে ইংল্যান্ড দলে বেশকিছু পরিবর্তন আর বেশকিছু ভালমানের পারফরমারের আগমন ইংল্যান্ডকে আশাবাদী করতেই পারে প্রথমবারের মত শিরোপা জয়ের ব্যাপারে। উপমহাদেশে অন্যান্য বাইরের দলের মত তাদেরকেও কিছুটা ভোগাতে পারে স্পিনের বিরুদ্ধে দূর্বলতা আর উপমহাদেশের কন্ডিশন। কারন ফাস্ট-বোলিং নির্ভর ইংল্যান্ড দলে খুব বেশি বিশ্বমানের স্পিনার নেই, কিন্তু তাদের ব্যাটসম্যানরা ফর্মে থাকায় বোলিংয়ের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারে তারা। সবমিলিয়ে এই বিশ্বকাপে চমক দেখানোর অপেক্ষায় ইংল্যান্ড।
শ্রীলংকা
১৯৯৬ এর চ্যাম্পিয়ন আর বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক শ্রীলংকাকেও রাখা যেতে পারে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের তালিকায়।
নিজ মাঠের সুবিধা আর পারফরমেন্স কাজে লাগিয়ে তারাও হয়তো পেয়ে যেতে পারে ২য় শিরোপার দেখা। জয়সুরিয়া আর চামিন্দা ভাসের মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে বাদ দিলেও দলে রয়েছেন আরো বেশকিছু তারকা ব্যাটসম্যান আর বোলার যারা নিজেদের কন্ডিশনে হারিয়ে দিতে পারে যেকোন দলকেই। বিশেষ করে এই বিশ্বকাপের পর ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষনা দেওয়া মুরলিধরন চাইবেন তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটি স্মরণীয় করে রাখতে। এর পাশাপাশি দলের বাকি খেলোয়াড়রাও যদি পারফর্ম করতে পারেন তাহলে শিরোপা জয় অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে তাদের জন্য। আর হোম এডভান্টেজ কাজে লাগিয়ে শ্রীলংকাও চাইবে শিরোপা নিজেদের করায়ত্ত করে নিতে।

ফেভারিট তালিকায় প্রতিবার প্রথমে নাম থাকলেও এবার সাম্প্রতিক পারফরমেন্স বিবেচনায় যে দলটিকে তালিকায় স্থান দেওয়া গেলোনা সেটি হলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। একসময় ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করা অসিরা আর ভগ্নদশা প্রাপ্ত। একের পর এক তারকা খেলোয়াড়ের বিদায়ের পর ক্রমাগত হার অসিদের কোনঠাসা করে ফেলেছে। অসি সাম্রাজ্য আজ বিলীন...তবুও সমর্থকরা আশায় বুক বাধঁতে পারেন যদি বিশ্বকাপে নিজ রুপে ফিরে আসতে পারে অস্ট্রেলিয়া তাহলে হয়তো বিশ্বকে চমকে দিতেও পারে টানা ৩ বার সহ ৪ বারের শিরোপাজয়ী অসিরা।

অন্যদিকে, আরেকটি দল নিয়ে কিছু বলতে চাই সেটি হলো পাকিস্তান। আনপ্রেটিক্টেবল খেতাব যাদের সাথে মিলে ভালোভাবেই, বিতর্ক আর কোন্দল জর্জরিত পাকিস্তান দল নিয়ে আশাবাদীর পরিমাণ খুবই কম। তবুও উপমহাদেশের ক্রিকেট শক্তি হওয়ায় তারাও চমক দেখাতে পারে। দলে ন্যাচারাল ট্যালেন্টের কোন অভাব না থাকলেও বিতর্ক আর নানা সংকটে সম্ভাবনাময় দল হয়েও ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হওয়ার কথা থাকলেও দেশে সন্ত্রাসী হামলা আর রাজনৈতিক সংকটের কারনে বঞ্চিত হতে হয়েছে তাদের। ফলে পাকিস্তান চাইবে বিশ্বকাপে ভালো কিছু করে দেশবাসী আর সমর্থকদের কিছুটাও হলেও আশা জাগাতে।

অনেক আলোচনার ভীড়ে আমাদের বাংলাদেশকে নিয়ে তো কিছুই বলা হলো না, বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ফেভারিটের তালিকায় নেই বাংলাদেশ, সহ-আয়োজক বাংলাদেশ তবুও আশাবাদী এই বিশ্বকাপে চমক জাগানো খেলা দেখিয়ে সবাইকে চমকে দিতে। নিজ কন্ডিশনের সুবিধা পাবে তারাও, ফলে ২য় রাউন্ডে উঠার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী বাংলাদেশ দল। আমাদের টাইগারদের নিয়ে আমাদের আশা আরো বেশি, তবুও পরিস্থিতি আর অবস্থান বিবেচনায় ২য় রাউন্ডে উঠতে পারলে আর বেশকিছু জায়ান্টকে হারিয়ে চমক দেখাতে পারলেই আমরা খুশি। আর যদি ২০০৩ বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক কেনিয়ার মত বাংলাদেশও যদি সবাইকে চমকে দিয়ে উঠে যেতে পারে সেমিতে তাহলে সারাদেশ নিঃসন্দেহে মেতে উঠবে অনাবিল আনন্দে! মানুষ মাত্রেই স্বপ্ন দেখে, আসুন আমরাও স্বপ্ন দেখি বিশ্বকাপের ট্রফি আসবে একদিন আমাদের ঘরেও।

সকল জল্পনা-কল্পনা আর আলোচনার অবসান ঘটবে আগামী ২রা এপ্রিল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালের মধ্য দিয়ে যেদিন নির্ধারিত হবে কে হবে এবারের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন। ততদিন পর্যন্ত চলতে থাকুক আলোচনা......


2 মন্তব্য:

প্রখর রুদ্র বলেছেন...

আমার মনে হচ্ছে শ্রীলঙ্কা বা ভারতই এবার জয়ের মালা গলায় পরবে। বাংলাদেশ দলটা আরেকটু ব্যালান্সড হলে আমাদের দেশকে নিয়েও স্বপ্ন দেখতাম। সে যাই হোক, বিশ্লেষণধর্মী লেখাটা ভালো হয়েছে।

অভি আদিত্য বলেছেন...

ধন্যবাদ।
সম্ভাবনার দিক থেকে ভারতই এগিয়ে থাকবে বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু 'cricket is a game of uncertainity' ফলে শেষপর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে বাংলাদেশ ভারতকে আবারো হারিয়ে চমক দিতে পারলে খুশি হবো।

মন্তব্যে ইমোটিকন ব্যবহারের জন্য ইমোটিকনের পাশের কোডটি আপনার কি-বোর্ডের সাহায্যে টাইপ করুনঃ
:)) ;)) ;;) :D ;) :p :(( :) :( :X =(( :-o :-/ :-* :| 8-} :)] ~x( :-t b-( :-L x( =))

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন